করোনাভাইরাস আপডেটব্রেকিংরাঙামাটিলিড

করোনায় রাঙামাটির পরিবহনখাতে অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। জরুরি পরিষেবা, উৎপাদনমুখী বিশেষত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, কাঁচাবাজার, মুদি ও ওষুধের দোকান ব্যাতিত কার্যত লকডাউনে সবই অচলাবস্থা। বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, শমিংমল এবং গণপরিবহনও। ফলে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যেমনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন মালিকরা, তেমনি কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংকটে জীবনযাপন করছেন খাতসংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারিরা। গণপরিবহন বন্ধের পর থেকে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পরিবহনখাতে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি।

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মোটর মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে প্রতিদিন ২৯টি পাহাড়ীকা সুপার সার্ভিস ও ২৮ দ্রæত সার্ভিস বাস যাওয়া-আসা করে। এতে প্রতিটি পাহাড়ীকা বাস থেকে গড়ে ৪৮০০ টাকার টিকেট বিক্রি হয়। প্রতিদিন পাহাড়ীকা পরিবহনখাতে মোটর-মালিক সমিতির প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টিকেট বিক্রি হয়। সে হিসেবে করোনার প্রভাবে বিগত এক মাসে এ সড়কে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ৪২ লাখ টাকার টিকেট বিক্রি হয়নি। এছাড়া একই সড়কে দ্রæতযান সার্ভিস নামের আরেকটি গণপরিবহণ প্রতিদিন ২৮ বার চট্টগ্রাম-রাঙামাটি যাওয়া আসা করে। প্রতিটি গাড়ি থেকে গড়ে ২২০০-২৬০০ টাকা ভাড়া উত্তোলন করা যায়। সে হিসেবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কারণে মালিক সমিতি প্রতিদিন ৯-১০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করতে পারছেনা। এক মাসের বেশি সময়ে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিন লাখ টাকা। বিগত একমাসের বেশি সময়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অর্ধকোটি টাকা।

সূত্রে জানা গেছে, এ সড়কে চলাচলকারী প্রতিটি পরিবহনে চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারসহ কমপক্ষে তিনজন কর্মরত থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন কাউন্টারসহ মোট কর্মরত আছেন প্রায় সাড়ে ১২শ’ শ্রমিক-কর্মচারি। করোনার এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবাই বিপাকে পড়ে নানান সংকটে জীবনযাপন করছেন। এতে করে এই খাতের সংশ্লিষ্টদের পরিবারে অভাব-অনটন লেগেছে। সম্প্রতি মোটর মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পরিবহন মালিকদের জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা ঋণবাবদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সাড়ে চারশ’ শ্রমিক-কর্মচারীকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার (৬ মে) শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে ১২শ’ শ্রমিককে ১২শ’ টাকা জনপ্রতি হারে দেওয়ার করা রয়েছে।

কয়েকজন পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ মার্চ থেকে পুরো এক মাসের বেশি সময় ধরে কর্মহীন জীবনযাপন করছেন। প্রতিদিনের রোজগারের উৎস বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকের হাতে কিছু টাকা সঞ্চয় থাকলেও সেগুলো এখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনের সময়টাতে তাদের আরও কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড়াতে হবে।

রাঙামাটি শহরের বাসিন্দা কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক জানান, প্রশাসনসহ বিভিন্নভাবে কিছু ত্রাণ সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু এই সামান্য ত্রাণে আর কয়দিনই যায়। আবার হয়ত অনেকে এই সহায়তাও পায়নি। এসময়টাতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন আমাদের পাশে এগিয়ে আসলে দুর্দিনের দুঃসহ বেদনা কিছুটা হলেও লাঘব হতো।

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রহমান জানিয়েছেন, ২৬ মার্চ থেকে একমাসের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে পরিবহন সেক্টরে কর্মরত চালক, সহকারী ও ভাইজারসহ সকলেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পুরো একমাসে আমরা ভাড়া বাবদ প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। দিনদিনই এই ক্ষতির পাল্লা ভারি হচ্ছে। একদিকে যেমনি পরিবহনখাতে ক্ষতি হচ্ছে আরেকদিকে এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই কর্মহীন হয়ে সংকটে জীবনযাপন করছেন।

তিনি আরও বলেন, বিশেষত পরিবহনখাতে যারা কাজ করে থাকেন এদের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত মানুষ। এরা অনেকেই দিনে রোজগারের টাকা দিয়ে জীবকানির্বাহ করেন। এখন লকডাউনের এই অবস্থাতে মালিক-শ্রমিক সকলেই বিপদে পড়েছেন। আমরা এ পর্যন্ত এ সড়কের সাড়ে চারশ’ শ্রমিক-কর্মচারীকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্নভাবেও সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মোটর মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি ও রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শহীদুজ্জামান রোমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৬ মার্চ থেকে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীন অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এতে করে পরিবহন বন্ধ থাকায় এই সেক্টরের কর্মচারী অলস জীবনযাপন করছেন। কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিকালীন সময় পার করতে হলে আমাদের সকলেই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − five =

Back to top button