করোনাকালের বড় বিপত্তি- ‘টেনশন’

ব্যস্ততার মধ্যে থাকলে মানুষ তার জীবনের অনেক বড় দুর্ঘটনাও ভুলে থাকতে পারেন। কিন্তু ঠিক তার বিপরীতে দীর্ঘ ছুটি, এর ওপর গৃহবন্দি! এমত অবস্থায় থাকলে মারাত্মক রকমের বিরক্তিবোধও হয়। একই কাজ বারবার করতে লাগলে একঘেয়েমি চলে আসে। তার সঙ্গে মানসিক দুশ্চিন্তা তো ফ্রি বটেই! কেউ কি আর ইচ্ছে করে সব সময় দুশ্চিন্তা করে? পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষকে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করতে বাধ্য করেও বটে।
বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা’র এই দিনগুলোতে কম বেশি সব শ্রেণির মানুষই বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তা মত্ত আছেন। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা এখন জীবন বাঁচানো। প্রত্যেকেরই জীবনের প্রতি মায়া আছে। তাই লকডাউনে খুব সতর্কতার সঙ্গে করোনার কঠিনতম দিনগুলো কাটাচ্ছে মানুষ। দেশে যেহেতু নিম্নবিত্ত আর নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই লকডাউনে এ শ্রেণির মানুষগুলো সবচেয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে৷
উচ্চবিত্তের মানুষের দিন কাটছে অনায়াসে। তাদের অর্থচিন্তা নিয়ে মাথাব্যথা না থাকায় স্বস্তিতে দিন কাটাতে পারছেন। শুধুমাত্র ‘করোনা থেকে রক্ষা পেলেই যেন বাঁচি’ উচ্চবিত্তের এটাই এখন মূল দুশ্চিন্তা। জীবন বাচাঁনো, অর্থ ও ভবিষ্যৎ- সব মিলিয়ে মানুষ দুশ্চিন্তায় পাগলপ্রায়। চিন্তা যেন তাদের নাছোড়বান্দা! তাছাড়া ঘরে বসে থাকতে থাকতে ভীষণ রকমের মানসিক দুশ্চিন্তা গ্রাস করছে অনেককেই। শিশু হতে শুরু করে বয়স্ক মানুষ কেউই রেহাই পাচ্ছে না এ অবস্থা থেকে। শিশুরা আজ বাহিরের জগত থেকে বঞ্চিত। শিশুরা ঘরের বাহিরে খেলাধুলা করতে না পারায় বিরক্ত হচ্ছে। শিশুদের এই আচরণ পরিবারের ওপরও প্রভাব ফেলছে৷ যার কারণে সবাই অতিষ্ট।
বান্দরবানের এক সরকারি অফিসে কর্মরত মিনু মারমা জানিয়েছেন, ‘আগে কাজের কারণে বাইরে থাকতে হত; তখন পরিবারকে সময় দিতে পারতাম না। এখন বাসায় সময় দিতে পারছি। তবে বন্ধু ও কলিগদের অনেক মিস করি। টেনশন হয় কবে আমাদের জীবন আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। সবাই আগের মতো সুস্থ সুন্দরভাবে জীবন যাপন করব।’
খাগড়াছড়ির বিভাস চাকমা জানিয়েছেন, ‘কোয়ারেন্টিনে থেকে বুঝলাম সময়ের মূল্য আসলেই কি? এই সময়ে বাসার কাজে মা’কে টুকটাক সাহায্য করি। সামনের দিনগুলো অবশ্যই ভাবায় খুব। কি হবে তাই নিয়ে টেনশনে আছি।’
রাঙামাটির নিউটন চাকমা জানান, ‘টেনশনে মত্ত এখন পুরো দুনিয়া। শ্রমজীবী মানুষের কাছে এই সময়টা যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষ সামনের দিনে খাদ্য সংকটে ভূগবে কিনা এই নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত। এর ওপর শিক্ষার্থীদের বড় দুশ্চিন্তা ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে এইসএসসি পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষাও। কবে নাগাদ এই গোমট পরিস্থিতি কাটবে, কবে নাগাদ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরবে এই দুশ্চিন্তা আমাদের পিছু ছাড়ে না।
রাঙামাটির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাওন হাসনাত বলেন, ‘করোনার পর থেকেই অফিস বন্ধ। বাসায় থাকছি। এখানে আমি খুব ভালোই আছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত বাড়িতে বসবাসরত মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানের জন্য খুব ভাবতে হয়। প্রতিদিন কথা হলেও দুশ্চিন্তা কাটে না।’
তবে স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও হতাশায় ভূগলে মানুষ কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। এতে করে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে কোনো কাজেই মানুষের মন সায় দেয় না। এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তার চাপে ভুগলে মানুষ হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের পরামর্শ, বিশেষত করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাসায় আনন্দের সহিত থাকার চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া প্রয়োজনে বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের আকৃষ্ট করতে হবে। অন্যথায় করোনার চেয়েও মানুষ দুশ্চিন্তায় বেশি হতাশায় ভূগবে।