সুহৃদ সুপান্থ/আরমান খান
দল বহিষ্কারের পর ভোটের মাঠ থেকে সরে গিয়েছিলেন তারা ভোটের পাঁচদিন আগেই। ‘কাজ’ও করেছেন ‘কিছুটা’ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে। কিন্তু সেটা কতটা করলেন তা বোঝা গেলো ভোটের ফলাফলের পরই ! মাইনীমুখ ইউনিয়নে ঠিকই পরাজিত হয়েছে নৌকার প্রার্থী ! আর গুলশাখালি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হলেও ভোটের মাঠে থেকে আগেই ঘোষণা দিয়ে সরে যাওয়া প্রার্থীই তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ! ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা আদতেই ‘কতটা সরে গেছেন’ বা ‘সরে ছিলেন’ তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘সংশয়’ ! আর ভোটের ফলাফল ঘোষণা করার পর এমন সংশয়ে ঘেরা এক ছাত্রলীগ নেতার একটি স্ট্যাটাসের নীচেই কাকতালীয়ভাবে দুই প্রার্থীই হাজির যেনো বুকের ভেতরের লুকনো সব ‘রাগ ক্ষোভ আর অভিমান’ নিয়ে। রকিব সরাসরি লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি বাবুল দাশ বাবু ও জেলা সেক্রেটারি মুসা মাতব্বরেক ‘দায়ী’ করেছেন আর এরশাদ একাধিক মন্তব্যে ও স্ট্যাটাসে ‘বাবু’কেই দুষেছেন সব কিছুর জন্যই ! উপজেলা এবং জেলা আওয়ামীলীগ বিষয়গুলোকে ‘নজর’-এ নিয়েছে বলে জেনেছে পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম।
ভোটের ফলাফরে সাত ইউনিয়নের চারটিতেই নৌকার পরাজয়ে ক্ষুদ্ধ ও ব্যথিত উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আল মাহমুদ সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ‘দিন শেষে সবাই সফল,আমরাই বোকা, আমরাই ব্যর্থ’ এই স্ট্যাটাসের নীচেই হাজির হন মাইনী ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় চাপে সরে যাওয়া এরশাদ সরকার। তিনি পৃথক তিনটি কমেন্টে লিখেন-‘বাবু সাহেব বললেন আমি বসে গেলে কমল এক মিনিট দেরি করবেনা বসে যাবে আমিত বসে গেলাম তাহলে কমল কে কেন বাবু বসালনা, এটাইত নিল নকসা তুরাইত জিতলি হারলি কোথায়,আমি যদি নাটক করতাম তাহলে ঘোড়া মার্কায় ভোট দিতাম আমার নিজেদের একশ ভোট আছে অথচ সারা ইউনিয়নে ঘোড়ায় ভোট পেয়েছে ১৫। টা তাহলে কে বেইমান আমি নাকি ওরা’।
এর নীচেই আরো বেশি আক্রমনাত্মক ছিলেন গুলশাখালি ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে সরে যেতে বাধ্য হওয়া রকিব হোসেন। তিনি লিখেন-‘ আওয়ামীলীগ আমার জীবন শেষ করে দিল। আমাকে ২বার জবাই করা হয়েছে। সকল নাটের গুরু হারামজাদা বাবু এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক মূসা মাতব্বর।”
আবার নিজের টাইমলাইনে এরশাদ লিখেছেন-‘এই রিপননেয়া তুর জেলে পাড়ায় ভোট আছে ২৮০টা তাহলে নৌকায় ভোট পেল ২৫৩টা তুদের ভোট গুলো কোথায় গেল দলের নাম দিয়ে কোটি কোটি টাকা আৎসাদ করবি আবার দলের সাতে বেইমানি করবি সে টা মেনে নিবেনা জনগন প্রস্তুহও সব জবাব জনগন দিবে বেইমান বাহীনি দশ বছর আগের কথা মনে করে দেখ আর এখন তুরা পাছ কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি বানাও আবার ত্যাগি নেতাদের কে বল বলছ রাজাকার আরে শিপু আর রিপন তুরা জারজ সন্তান বি এন পি শেষ করে এখন আবার আওয়ামীলিগ শেষ করবি সেটা হবেনা কথাটা মনে রাকিস কালাবাহীনি।’
আরো একটি স্ট্যাটাস তিনি লিখেন-‘কালাবাহীনির নীলনকসা কাজে লাগিয়ে আমাকে নির্বাচন থেকে সরাল আর কমলকে জিতাল বাবু বড় বড় কথা বলেছিল এরশাদ যদি নির্বাচন না করে তাহলে কমল ও করবেনা এখন কোথায় গেল তার বড় বড় চাপাবাজি এটাইত ছেয়েছিল বাবু আমারা বেইমান না তাই দলের স্বর্থে চার দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নৌকার সাতে কাজ করেছি আমার নিজের আত্নীয় স্বজনের ভোট আছে এক হাজার আমি ঘোড়া মার্কায় ভোট পেয়েছি ১৫ টা আর বাবুর নিজ ওয়াডে নৌকায় পেয়েছে ১৫৩ ভোট আর আনারস পেয়েছে ৪৪৬ ভোট বিচার আমি আপনাদের হাতে দিলাম কে বেইমান আমি নাকি বাবুর কালাবাহীনি।’
যে দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে দল থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন একজনের পিতা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার ও চাচা সহসভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুর রহিম, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরপরই তাদের এমন আক্রনাত্মক বক্তব্যে অবাক নেতাকর্মীরাও।
লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কমকে বলেছেন-বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমাদের জেলা সেক্রেটারি ও উপজেলা সেক্রেটারিকে ‘কটুক্তি’ করে যে বক্তব্য,সেটা আমরা সংগ্রহে নিয়েছে,এই বিষয়ে সিনিয়রদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করলে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর বলেন- ‘তারা শাক দিয়ে মাছ ঢেকে আর কোন লাভ নাই। তারা কে কি করেছে সবই আমরা দেখেছি,নেতাকর্মীরা দেখেছে। জেলা আওয়ামীলীগের সভায় সব বিষয়েই আলোচনা হবে এবং পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ একইসাথে লংগদুতে নৌকার পরাজয়ের জন্য দলের ‘আভ্যন্তরীন বিরোধ ও বিদ্রোহী প্রার্থী’দের দায়ি করে এইসবের বিরুদ্ধে শক্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন মুছা মাতব্বর।