প্রতিবেশি জেলা খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও তাঁর স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজের ট্রান্সফরমার স্থাপন ও ১১ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক সংযোগ কাজের কারণে সোমবার সকাল আটটা থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো রাঙামাটির লংগদু উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। একজন সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কলেজের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পুরো উপজেলার মানুষকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। সোমবার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের কারণে গরমে দুর্বিষহ অবস্থা ছোট-বাচ্চা থেকে শুরু বয়স্কদের। নিজ দেশের খেলা দেখতে না পারায় ক্ষুদ্ধ উপজেলার মানুষ।
প্রায় ১৩ ঘন্টার অধিক পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। বিশ্বকাপে নিজ দেশের খেলাচলা অবস্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, এমপির নিজস্ব উদ্যোগে ২০১৫ সালের ১ জুলাই খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলার দীঘিনালা-লংগদু সড়কের মধ্যবোয়ালখালি এলাকায় নতুন প্রতিষ্ঠিত খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও তাঁর স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘কুজেন্দ্র মল্লিকা মডার্ণ কলেজ’। এই কলেজের ট্রান্সফরমার স্থাপনের জন্য গত দুইদিন ধরে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন কাজ করছে।
লংগদু উপজেলার বাসিন্দা ও উপজেলা জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সবসময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। এতে করে গরমে অতিষ্ট হয়ে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমাদের তো জানার অধিকার আছে যে, এতো দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকবে না। তিনি বলেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া একজন এমপি’র কারণে এমন ঘটনা দু:খজনক, এটা কোনভাবেই উচিত নয়।’
উপজেলাবাসীর অভিযোগ, সবসময়ই লংগদুতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৪-৫ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। তার মধ্যে হালকা বাতাস ও সামান্য বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎহীন থাকতে হয় কয়েকদিন। উপজেলায় বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো অফিস না থাকায় এই বিষয়ে পাশ^বর্তী জেলার দীঘিনালা উপজেলায় যোগাযোগ করতে হয় তাদের।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘আমি দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, লাইনের সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।’
দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী অশোক কুমার দাশ বলেন, ‘সকাল থেকে লাইনের কাজ চলছে, সে জন্যে লংগদুতে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। খাগড়াছড়ি জেলার এমপির কলেজের বিদ্যুৎ লাইনের কাজের কথা জানতে চাইলে তিনি অকপটে স্বীকার করে বলেন, ‘এমপির কাজ না করে তো পারা যায় না।’
খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামাল আহম্মদ জানান, ‘উনার (কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা) একটা কলেজের কাজ, সেটা তো করে দিতে হবে। আর লাইনেরও কিছু সমস্যা ছিল, সেই কাজও করা হয়েছে। খুব দ্রুত শেষ করে লংগদুতে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করতে বলেছি। আশা করি কাজ শেষ করে লাইন সচল করে দিবে।’
এ বিষয়ে জানার জন্য খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার মুঠোফোনে একাধিবার চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ব্যক্তিগত সহকারি খগেন ত্রিপুরার সাথে যোগাযোগ করা হলে,তিনি সংসদ সদস্য জানিয়ে সংসদে আছেন জানিয়ে বলেন, তিনি আজ (সোমবার) রাতে আর কথা বলতে পারবেন না, মঙ্গলবার সকালে কথা বলবেন।’
সর্বশেষ : এদিকে রাত নয়টায় এই রিপোর্ট লেখার জন্য বিভিন্ন স্থানে ফোন করা হলে রাত আনুমানিক নয়টার পরে উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয় প্রায় ১৩ ঘন্টা পরে !