জিয়াউল জিয়া
‘আমরা কেউ যেন কিছু করতে পারছি না। এর কারনে ভূমি কামিশনের প্রতি সাধারণ মানুষের হতাশা বেড়েছে।’
সোমবার দুপুরে রাঙামাটি আসার পর রাঙামাটি সার্কিট হাউজে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
তিনি আরও বলেন, আমার এই কাজটি তো বিচারিক না। এখানে কমিটির বাকীদের মতামতের উপর নির্ভর করেই করতে হয়। এখানে পাহাড়ি-বাঙালি না, বাংলাদেশেরে নাগরিকদের সুষ্ঠু বিচার দেয়ার জন্য আমাদের এই কাজ। কেউ যেন ক্ষতির সম্মূক্ষিন না হয়, সেটাও দেখবো আমরা।
রাঙামাটি আসার উদ্দেশ্য জানাতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘করোনার কারনে দীর্ঘদিন সভা করা হয়নি। করোনার আগে কাজের অনেক দূর আমরা এগেয়ি ছিলাম। কাজের গতিকে বৃদ্ধির লক্ষ্যেই রাঙামাটি আসা। কমিটির এখানকার দুই সদস্যের সাথে আলাপ করার কথা থাকলেও ওনারা শারীরিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকায় আপাতত আলোচনা হয়নি।’
তিনি আর বলেন, পাহাড়ে দ্বৈত ভূমি বন্দোবস্তি আছে, সেই সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে সরকার এই কমিশন করে দিয়েছে. আইনের মাধ্যমে কমিশনকে এই ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। কিন্তু বিভিন্ন কারনে প্রত্যাশিত ফল দিতে পারিনি আমরা। বিধিমালা প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা দেখি পরের বার সভায় এই বিষয়ে কাজের আরও অগ্রগতি হবে বলে আশা করি।
প্রসঙ্গত, পার্বত্য চুক্তি সাক্ষরের পর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০১ সালে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন করে সরকার। আইনটি ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয়। কিন্তু আইন সংশোধনের পর কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। এই অবস্থায় থমকে আছে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ। আইনটি সংশোধনের পর কমিশন কাজ শুরু করে এবং বিরোধপূর্ণ জমির মালিকদের কাছে দরখাস্ত আহ্বান করে। কিন্তু বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় কাজে হাত দিতে পারেনি কমিশন। এরপর আসে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। স্থবির হয়ে পড়ে তিন পার্বত্য জেলার ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ।
কমিশনের সর্বশেষ সভা হয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। মার্চে সভা আহ্বান করা হলেও করোনা মহামারির কারণে সেটি স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে পুরো ২০২০ সাল কর্মহীনভাবে চলে যায়। এর মধ্যে কমিশনে চেয়ারম্যানের মেয়াদও শেষ হয়। তাঁকে আবার নতুন করে নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি গত বছরের ৩১ মে কমিশনে যোগ দেন। কিন্তু করোনার কারণে কোনো কাজ হয়নি।
উল্লেখ্য, পাহাড়িদের সশস্ত্র সংগ্রামের অবসানে ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়াম লীগ সরকার ও পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি হয় যা শান্তি চুক্তি নামে পরিচতি।এ চুক্তির আলোকে ২০০১ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন’ গঠন করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে ভূমির বিরোধ মেটাতে সরকার আইন করলে তা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষর আপত্তি ওঠে। এর প্রেক্তিতে সর্বশেষ ২০১৬ সালে আইনটির সংশোধন করা হয়।দীর্ঘদিন আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে নানা টানাপোড়েনে কমিশনের কার্যক্রমে স্থবির থাকলেও স¤প্রতি সক্রিয় হয়েছে এ কমিশন। সংশোধিত আইনের ভিত্তিতে বিধিমালা প্রণয়ন করে পাহাড়ি জমির বিরোধ মেটানোর উপর জোর দিচ্ছে সরকার। তবে ভূমি নিষ্পত্তির বিধির কয়েকটি শর্ত নিয়ে এই আন্দোলনকারীদের আপত্তি রয়েছে।
বিরোধপূর্ণ ভূমি নিয়ে কমিশনের কাছে তিন পার্বত্য জেলা থেকে তিন হাজার ৯৩৩টি আবেদন জমা পড়ে এর মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ির ২ হাজার ৮৩৯টি, রাঙামাটির জেলায় ৭৬৯টি, বান্দরবানের ৩২৫টি আবেদন।