বিপুল সংখ্যক ভক্তের সমাবেশ ঘটলে করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশংকায় আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় প্রয়াত বৌদ্ধ ভিক্কু উপঞা৷ জোত মহাথের’র মরদেহ বান্দরবানে স্থানান্তর স্থগিত রাখা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে জনজীবনে উৎকন্ঠার অবসান ঘটে এবং প্রশাসনে স্বস্তি ফিরে আসে।
সোমবার দুপুরে প্রয়াত ভিক্ষুর মরদেহ চট্টগ্রামের রাউজান থেকে বান্দরবান শহরের রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে নিয়ে আসার কথা ছিল। এতে শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া বিপুল সমাবেশের পুনরাবৃত্তি বান্দরবানেও ঘটার আশকায় প্রশাসন ও জেলা পুলিশ উদবিগ্ন ছিল।
রবিবার বিকেলে বান্দরবান পাবত্য জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বান্দরবান রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা এতে সভাপতিত্ব করেন। জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং ভিক্ষু সংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
তিন’দিন লাইফ সাপোর্ট-এ থাকার পর বান্দরবান রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ এবং দি ওয়ার্লড বুদ্ধ শাসন সেবক সংঘের সভাপতি ভিক্ষু উপঞা জোত মহাথের গত ১৩ এপ্রিল দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে পরলোক গমন করেন। এর পরপরই তাকে বান্দরবানে নিয়ে না এসে আধ্যাত্মিক আচারের কথা বলে চট্টগ্রামের রাউজানের খৈয়াখালী গ্রামের ধর্ম বিজয়া রাম বিহারে নিয়ে যান তার প্রধান শিষ্য ভদন্ত পঞঞা চক্ক। এ ঘটনায় বান্দরবানের বৌদ্ধ সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
বিষটি নিয়ে একাধিকবার অনুষ্ঠিত সভায় অবিলম্বে প্রয়াত ভিক্ষুর মরদেহ বান্দরবানে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় রাজগুরু বিহার পরিচালনা কমিটি।
এদিকে প্রয়াত ভিক্ষুকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিপুল মানুষের সমাগমে করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশংকায় রাউজানের ইউএনও গত শনিবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভিক্ষুর মরদেহ খৈয়াখালী থেকে বান্দরবান বিহার কমিটির কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন ধর্ম বিজয়া রাম বিহার কমিটিকে। একই সাথে তিনি ওই বিহার এলাকা সম্পূর্ণ লক ডাউন ঘোষণা করে জনগণের আসা যাওয়া বন্ধ করে দেন।
এদিকে বান্দরবানের রাজগুরুকে নিজ বিহারে নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিয়ে বিপাকে পড়ে রাজগুরু বিহার কমিটি। পুরো চট্টগ্রামে লক ডাউন অবস্থায় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানসহ মরদেহ পরিবহন করার সময় ব্যাপক জনসমাগমের আশংকা দেখা দেয়। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানুষের ঢল নামার প্রসঙ্গও সামনে চলে আসে। ফলে প্রশাসনের অনুরোধে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত প্রয়াত ভান্তের মরদেহ রাউজানের ধর্ম বিজয়া রাম বৌদ্ধ বিহারে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজগুরু বিহার পরিচালনা কমিটি।
সভায় উপস্থিত একাধিক সুত্র জানিয়েছে, সভায় এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, করোনা পরিস্থিতির অবসানের পর দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে যথাযোগ্য আনুষ্ঠানিকতায় প্রয়াত উপঞা জোত মহাথের’র মরদেহ বান্দরবানে নিয়ে আসা হবে এবং দেশি-বিদেশি ভিক্ষুদের অংশ গ্রহনে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রয়াত ভান্তেকে বান্দরবান নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে হাজারো ভক্তের ভীড়ে করোনা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ার আংশকায় জেলায় উৎকন্ঠার অবসান ঘটে। স্বস্তি ফিরে আসে প্রশাসনেও।
Previous Articleরাজস্থলীরটিসহ রাঙামাটি জেলার ৭৩ জনের রিপোর্ট’ই নেগেটিভ
Next Article রাঙামাটির অবরুদ্ধ বাজারের নি:সঙ্গ বিক্রেতারা!