জাকির হোসেন, দীঘিনালা ॥
একসাথে সরকারি দুটি বিভাগ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বেতনভাতা এবং অবসরভাতা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে দীঘিনালায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মো. সেলিম তালুকদার খাগড়াছড়ির দীঘিনালার কাঁঠালতলী আবাসিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হেডকুক হিসেবে কর্মরত। হেডকুক হিসেবে সরকারি বেতন ভোগ করলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভোগ করেছেন বিজিবি’র অবসর ভাতাও। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে রইঅঝঝ++ (অনলাইন) পদ্ধতিতে তার বেতন ভাতার বিল দাখিল করা হলে কর্মচারীর নাম পেনশনার অপশনে প্রদর্শিত হয়। তাতেই বের হয়ে থলের বিড়াল। তবে, এই অনিয়ম বা বেআইনি কার্যক্রম ঢেকে চাকুরিতে বহাল থাকার জন্য তদবির এবং সার্বিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্ত সেলিম।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এবং শিক্ষা অফিস প্রেরিত পত্রাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৯৩ সালে মো. সেলিম তালুকদার কুক হিসেবে বিজিবিতে যোগদান করেন এবং ২০০৬ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি বিজিবি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর থেকেই তিনি নিয়মিত অবসর ভাতা গ্রহণ করছেন।
অপরদিকে একই ব্যাক্তি নিজের তথ্য গোপন রেখে ২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর উপজেলার কাঁঠালতলি আবাসিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হেডকুক হিসেবে যোগদান করেন। তখন থেকে তিনি সে বিদ্যালয়ের অনুকূলে বেতনভাতাও গ্রহণ করছেন। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনলাইন পদ্ধতিতে গিয়ে আটকে যান সেলিম। চাকুরী ঠিক রেখে বিষয়টি সমাধানের জন্য এখন চলছে সেলিমের দৌড়ঝাঁপ।
বিষয়টি নিয়ে গত মাসে (২৬/০৫/২০২২) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার একটি পত্রও দিয়েছেন মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরে। সে পত্রে বিস্তারিত উল্লেখ করে পত্রের শেষাংশে লেখা হয়েছে, ‘বর্ণিত কর্মচারীর চাকরি সংক্রান্ত রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, তিনি কাঁঠালতলি আবাসিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হেডকুক হেসেবে যোগদানের (০১/১২/২০০৮) পর একই সাথে বেতনভাতা ও বিজিবির অবসভাতা গ্রহণ করে আসছেন। একই সাথে সরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে সুযোগ গ্রহণের বিষয়টি তার জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পর তিনি তার বিজিবির পেনশন বহিঃ………. সমর্পন করেন এবং গৃহীত পেনশনভাতা ফেরত দেয়ার অঙ্গিকার করেন। বর্তমান কর্মস্থল থেকে বন্ধ থাকা বেতনভাতা নিয়মিত করণের/চালু করণের লক্ষে আবেদন করেন। তার স্বব্যাখ্যাত আবেদনখানা মহোদয়ের পরবর্তী সদয় কার্যার্থে সুপারিশসহ প্রেরণ করা হলো।
জন্ম নিবন্ধনেও গড়মিলঃ মো. সেলিম কাঁঠালতলি আবাসিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের সময় তার জমা দেয়া বিদ্যালয়ের ছাড়পত্র এবং জন্ম নিবন্ধনে দেখা যায় জন্ম তারিখ ১৯৭৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তিনি বিজিবিতে যোগদান করেছিলেন ১৯৯৩ সালে। বিদ্যালয়ে জমা দেয়া জন্ম নিবন্ধন সঠিক হয়ে থাকলে বিজিবিতে যোগদানের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৩বছর, যা প্রশ্নবিদ্ধ।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. সেলিম তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তিনি বিজিবি থেকে গৃহীত অবসর ভাতা ফেরত দিবেন মর্মে আবেদন করেছেন। এখন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুস্মিতা ত্রিপুরা জানান, ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এখন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ি পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।