গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিবাসীর জন্য একটি স্মরনীয় ঘটনার সৃষ্টি করেছে ১ ঘন্টার মধ্যে সারা জেলায় একসাথে দুই লক্ষ তালের বীজ রোপন কর্সূচীর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
রাঙামাটিতে এক সাথে দুই লক্ষ বীজ বা চারা রোপনের ঘটনা অতীতে কোন সময় ঘটেনি। আর এই তালবীজ রোপন কর্সূচীতে সকলের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণের বিষয়টিও ছিল লক্ষ্যনীয় । সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী , বিভিন্ন পেশাজীবি মহল সহ সকল স্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহনে এই সব তাল বীজ রোপন কর্মসূচীটি সজীবতা পেয়েছিল। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের আলোকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এই সব তালের বীজ সংগ্রহ করে তা উপজেলা ও পৌরসভায় বিতরনের মাধ্যমে রোপন করা হয়েছিল বিদায় ব্যতিক্রমধর্মী এই কর্মসূচীর জন্য ধন্যবাদ পাবেন জেলা প্রশাসন।
হঠাৎ করে তালবীজ রোপনের এই মহা আয়োজন কেন? এই বিষয়ে অনেকের মাঝেই প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল । তবে তালগাছের উপকারিতার বিষয়ে ধারণা প্রচারের পর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সকলের মধ্যে। তাই তালবীজ রোপনে উৎসাহ অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
তালগাছের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে যে প্রচারনাটি রাঙামাটিবাসীর মনে সব চাইতে বেশী দাগ কেটেছে তা হচ্ছে তালগাছ বজ্রপাত নিরোধক । তাল গাছ অন্যান্য গাছের তুলনায় লম্বা হওয়ার কারনে বজ্রপাতের সময় তা প্রথমেই এই গাছে আকর্ষিত হতে পারে , এতে বজ্রপাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমে আসতে পারে। তাছাড়া তালগাছ এর শিকড় মাটি আকড়ে রাখে। তালগাছের ফলের রস বিভিন্ন পিঠা তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। কাঁচা তালের শাষ গ্রীষ্মকালে অনেকের কাছে সুস্বাদু খাবার। তালগাছের পাতার পাখার শীতল বাতাসে এখনো অনেকে মন জুড়ে যায়, তালগাছের কাঠ ও গৃহ নির্মাণ এবং নৌকা নির্মাণ কাজে বিশেষ উপযোগি।
সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বজ্রপাতের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে। আগে মাঝে মধ্যে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলেও এখন প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। আর এইসব বজ্রপাতে ব্যাপক জানমালের ও ক্ষতি হচ্ছে। যেহেতু বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রকৃতিকে ব্যবহার করেই এর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব । সে ক্ষেত্রে রাঙামাটিতে তালগাছের আধিক্য হলে এখানে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমে আসবে । যদিওবা তাল বীজ রোপনের পর সেই তালগাছ বড় হতে যে সময়ের প্রয়োজন হয় সে সময় বিবেচনায় অনেকের মাঝে তালগাছ এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থাকেই। অনেকে বলেন তালগাছ যিনি লাগান তিনি সেই তালগাছের ফল দেখে যেতে পারেননা। তবে কৃষি বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০ হতে ২৫ বছরের মধ্যে তাল গাছ পরিপূর্নতা পায়। আর তালগাছের রক্ষণাবেক্ষণ তূলনামূলকভাবে সহজ হওয়ায় অনেকটা যতœ না পেলেও তাল গাছ নিজ থেকেই বেড়ে উঠে।
তালগাছের ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় পরিবেশ সহায়ক এইসব তাল গাছ অদূর ভবিষ্যতে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় মূল্যবান ভূমিকা পালন করবে।
এতক্ষণ পরিবেশ রক্ষায় এবং বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে জনগনের জানমালের রক্ষায় তাল গাছের ইতিবাচক দিক গুলো বিবেচনা করলে আশার আলোর সম্ভাবনা দেখা দিলেও একই সময় পরিবেশ রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে রাঙামাটির সড়ক গুলোকে চলাচল উপযোগী করে তোলার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হচ্ছে। একদিকে যেখানে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ২ লক্ষ তালের বীজ রোপন করার মতো মহৎ কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে ঠিক একই সময়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবধানে গত ১৩ জুন ভয়াবহ ভূমিধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থ রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানের সড়ক গুলোকে চলাচল উপযোগী রাখার লক্ষ্যে বল্লি মারার বা গাড়ার যে কর্মসূচী তাতে ৩০ হাজার গাছের খুঁটি বা বল্লি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকারন্তরে বলা যায় ৩০ হাজার গাছ কেটে এই ৩০ হাজার বল্লির সংস্থান করা হচ্ছে ! সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিকল্প কোন উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে বল্লি মেরে রাস্তা চলাচল উপযোগি রাখা হচ্ছে এবং বল্লির জন্য গাছ কাটতে বাধ্য হতে হচ্ছে। তবে এসব বল্লির স্থায়ীত্ব কতদিন হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। এর সময়কাল কিংবা উপযোগিতা কতদিন থাকে সেটাই দেখার বিষয়। একদিকে বিকল্প উপায় হিসাবে এই সব বল্লি লাগানো কর্মসূচী অপর দিকে বল্লির খুঁটির জন্য ব্যাপক হারে গাছ কেটে পরিবেশের ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলা কতটুকু বাস্তব সম্মত সেটা ভেবে দেখা দরকার। তাছাড়া রাঙামাটির সড়ক গুলোর এখন যে অবস্থা তাতে বৃষ্টিপাত হলে প্রতি মূহুর্তেই এইসব সড়কে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হতে পারে বিধায় রাঙামাটির সড়ক গুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে সুদুর প্রয়াসী চিন্তা ভাবনা এবং কর্মপরিকল্পনার দরকার ।
সড়কের ভাঙ্গন রোধের কাজে বল্লিমারার জন্য ব্যাপক হারে গাছ কাটার বিষয়টি আলোচনায় আনার বিষয়টি অবতারিত হয়েছে একটি বিশেষ কারণে। কেননা ১৩ জুনের রাঙামাটিতে ব্যাপক ভুমিধসের কারণ হিসাবে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল পাহাড় কর্তন এবং নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন। সে প্রেক্ষাপটে যে সব কারনে এই প্রকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে সে একই কারণ, বিশেষ করে আবারো বৃক্ষ নিধনের ব্যাপকতা পরিবেশের জন্য কতটা সহায়ক হবে ? একদিকে যেখানে তাল বীজ ও গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষার আহবান এবং প্রচারনা, অন্যদিকে হাজার হাজার গাছ কেটে বল্লি মারার নামে বৃক্ষ উজাড়ের মহোৎসব কতটুকু সমর্থনযোগ্য ?