বেশ কিছুদিন যাবত সরকারি সংরক্ষিত সেগুন বাগান কেটে কাঠ পাচার করা হচ্ছে। অথচ বিষয়টি জানেন না বলে প্রথমে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা। পরে অবশ্য এর সত্যতা পেয়েছেন বলে স্বীকার করলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান বন কর্মকর্তা। ঘটনাটি খাগড়াছড়ির দীঘিনালার হাজাছড়া রেঞ্জের ২৮নং রেংকার্য্যা মৌজার রেংকার্য্যা মুড়ো (উঁচু পাহাড়) এলাকায়। আর এ কাজে জড়িত স্থানিয় চাঁদাবাজ আর অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২৮নং রেংকার্য্যা মৌজা এবং ২৯নং ছোটমেরুং মৌজা নিয়ে বনবিভাগের হাজাছড়া রেঞ্জ। এ রেঞ্জে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে ১০হাজার একর। সে এলাকায় বৈধভাবে পারমিটের মাধ্যমে বর্তমানে কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন সেগুন বাগান কাটা হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন। তবে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা এবং অবৈধভাবে কাঠ পাচার রোধে দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে যাওয়া সম্ভব হয়না বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা। অপরদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তাবাহিনীর উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সহযোগিতা চাইলে নিরাপত্তাবাহিনী নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে’।
সরেজমিনে গিয়ে সংরক্ষিত সেগুন বাগান কাটার সত্যতা পাওয়া গেলেও সশস্ত্র চাঁদাবাজ সন্ত্রাসিদের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহষ করেননি। তবে সে বনাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় পাঁচ বর্গ কি.মি. এলাকায় সেগুন বাগান কাটার কাজে ব্যাস্ত শ্রমিকরা। গাছের মুল অংশ রাখা হচ্ছে কাঠ হিসেবে পাচারের জন্য; আর বাকি অংশ খন্ড করে জড়ো করা হচ্ছে লাকড়ি হিসেবে বিক্রির জন্য। নাম গোপন রাখার শর্তে এ কাজে সংশ্লিষ্ট ও স্থানিয় লোকজন জানায়, বাগানটি কাটাচ্ছেন ছোটমেরুং এলাকার হান্নান নামের এক ব্যাক্তি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই হান্নান ছোট মেরুং আশ্রাফিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারি।
সংশ্লিষ্ট ২৮নং রেংকার্য্যা মৌজার হেডম্যান (মৌজা প্রধান) পূর্ণকুমার চাকমা জানান, সে এলাকায় সেগুন বাগান কাটার কোন খবর তিনি জানেন না। ব্যক্তি মালিকানাধিন কোনও বাগান কাটা হলে আইনানুগভাবে পারমিট করা হতো। আর পারমিট করা হলে তিনি মৌজাপ্রধান হিসেবে অবশ্যই জানতেন। সংরক্ষিত বাগান কাটা হলে চুরি করেই কাটবে; যা সংশ্লিষ্টরা না জানারই কথা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হান্নান জানান, তিনি শুধু লাকড়ি নিচ্ছেন বিক্রি করার জন্য; আর কাঠ নিচ্ছেন মেরুং ইউপি চেয়ারম্যার রহমান কবির রতন। হান্নান প্রথমে দাবি করেন, বাগানটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে নয়; এটি ব্যক্তি মালিকানাধিন। পরে অবশ্য এটি সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাগান বলে এক পর্যায়ে স্বীকার করেন হান্নান। এবং বাগানটি ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে এরকম সশস্ত্র সংগঠনের লোককে টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে বলেও জানান। অপরদিকে মেরুং ইউপি চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন জানান, বাগানটি জনৈক অরবিন্দু চাকমার নিকট থেকে ক্রয় করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন জানান, ওই এলাকায় বৈধভাবে কোন বাগান কাটার খবর তাঁদের কাছে নেই। তবে তিনি প্রথমে জোর দিয়েই দাবি করেন, কেউ বাগান কাটলেও সেটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নয়; ব্যক্তি মালিকানাধীন হতে পারে। কিন্তু কাটা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সেগুন বাগান, যা এ প্রতিবেদক নিশ্চিত হয়েছেন এমন কথা বলার পর ওই কর্মকর্তা উত্তরে জানান, বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। এর একদিন পর আবার জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাগানটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে তা সঠিক, তবে যে সেগুন গাছগুলো কাটা হচ্ছে সেগুলো বন বিভাগ সৃজন করেনি। কারণ বন বিভাগের সৃজিত গাছ অনেক আগেই অবৈধভাবে কেটে সাবাড় করেছে লোকজন। এর পর অনেকেই বন্দোবস্তি নিয়ে বাগান করেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিতে পারেননি। নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগীতা চাইতে পারতেন এমন প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘দেখি আবারো খোঁজ নিব’।
নিরাপত্তা দেওয়া বা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দীঘিনালা সেনা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়া উদ্দিন মাহমুদ জানান, নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতা চাইলে যে কোন সময় নিরাপত্তা বিধানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত থাকে।
প্রসঙ্গতঃ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যক্তি মালিকানাধিন সেগুন বাগানের গাছ কেটে বৈধভাবে বিক্রি করতে হলেও নিয়মনীতি রয়েছে। আর তা হলো, ভূমির মালিক মালিকানার প্রমানপত্র সহ প্রথমে মৌজা প্রধানের নিকট থেকে প্রতিবেদন নিবেন। পরে কর্তনযোগ্য গাছের সংখ্যা উল্লেখপূর্বক আবেদন জমা দিবেন ভূমি অফিসে। ভূমি অফিস ওই জায়গার মানচিত্র করে স্থানটি চিিহ্নত করে দিবে। এর পর সে আবেদন যাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সে কার্যালয়ের লোক সরেজমিনে গিয়ে গাছের সংখ্যার সত্যতা নিশ্চিত করে আবেদনটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠাবেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হয়ে আবেদনটি যাবে বনবিভাগের কার্যালয়ে। তখন বন বিভাগের লোক সরেজমিনে গিয়ে প্রতিটা গাছে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে কর্তনযোগ্য গাছ চিিহ্নত করে গাছের সংখ্যা নির্ধারন করে দিবে। এর পর গাছ কাটা হলে সেসব গাছে বনবিভাগের সিল মেরে সেগুলো আবারো চিিহ্নত করার পর বিক্রির জন্য গাড়িতে পরিবহন করতে পারবে।
1 Comment
PAHAR24 এই সব আজাইরা নিউজ ছাড়া কিছুই দিতে জানে না