হ্রদ পাহাড়ে ঘেরা পরিপূর্ণ রাঙামাটি। পর্যটকদের কাছে এ এক অরণ্য সুন্দরী। সাধারণত প্রতি বছরের অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই ছয়মাসেই এখানকার পর্যটন মৌসুম। পাহাড়ের অর্থনীতিতে পর্যটন এক গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম। পর্যটন মৌসুম ছাড়া রাঙামাটিতে তেমন ভাবে পর্যটকদের সমাগম ঘটে না। কিন্তু এ বছর এ সময়ে সাপ্তাহিক ছুটিসহ বৌদ্ধ পূর্ণিমা, মে দিবস ও শবে বরাতের টানা ছুটিতে এর ভিন্নতা দেখেছে এখানকার হোটেল-মোটেলের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টানা ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের সমাগম হবে এমন আশা করেও তার তেমন বাস্তবতা মেলেনি। যার কারণ হিসেবে তারা দেখছেন, এখানকার পর্যটন শিল্পের অনগ্রসরতা ও বর্তমান সময়ে বৈরি আবহাওয়া পরিস্থিতি।
গত বছরের পাহাড়ধসের পর নানা আতঙ্ককে কেন্দ্র রাঙামাটিতে পর্যটকদের তেমন দেখা মেলেনি চলতি মৌসুমে। তবে গেল দুই ঈদে রাঙামাটি পর্যটকরা এসেছেন। তখন এ খাতের আড়মোড়া ভাঙলেও এখন আরো চাঙ্গা হওয়ার আশাও পরিপূর্ণতা পেল না।
হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটিতে বেসরকারি ৪৫টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। প্রতিদিন তিন হাজার অতিথি হোটেল-মোটেলে থাকতে পারে। পর্যটকদের সেবা দিতে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে চার শতাধিক। গত দু-এক মাস ধরে পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হোটেল-মোটেল মালিকদের আয় কমে যায়। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বেকার সময় পার করছেন।
হোটেল নাদিশা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এবছর এমনিতে অন্য বছরের তুলনায় পর্যটক কম এসেছে। এ সময়ে আমরা পর্যটকদের সমাগম হবে ধারণা করেছিলাম। এক প্রকার প্রস্তুতিও নিয়ে ছিলাশ সেভাবে পর্যটক আসেনি। আর এখন আবহাওয়ারও অবস্থা তেমন ভালো না। এ ছুটিতে আর পর্যটক আসবে বলেও মনে হয়না।’
হোটেল মতি মহলের স্বত্বাধিকারী শফিউল আজম বলেন, ‘আমরা যেভাবে ভেবে ছিলাম টানা ছুটিতে রাঙামাটি বিপুর সংখ্যক পর্যটকদের সমাগম হবে তা ঘটেনি। আর ৩০ শতাংশ রুমও ভাড়া হয়নি। স্থানীয় পর্যটন শিল্পের আরো সমৃদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
পর্যটন বোটঘাটের ম্যানেজার রমজান আলী বলেন, আমাদের কিছুসংখ্যক বোট ভাড়া মোটামুটি হচ্ছে। তবে মৌসুমের মত নেই এখন। আর বৃষ্টির কারণে আমাদের অনেক বোট ভাড়া কমছে।
রাঙামাটি হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, আমাদের সমিতিতে ৪৫টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে রাঙামাটিতে পর্যটক নেই বললেই চলে। যার কারণে সবাই হোটেলের স্টাফদের বেতন-ভাতা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি এখন দুর্যোগপূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছ্ েপর্যটকরা এখন রাঙামাটির দিকে আকৃষ্ট নয়। যার কারণ এখানকার পর্যটন খাতের অনগ্রসরতা। এখানে দুইটা-একটা পর্যটন স্পট ছাড়া ঘুরার আর কোন স্থান নেই। যে কারণে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জেলার দিকে যাচ্ছে পর্যটকরা।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, আমাদের দুটি হোটেল-মোটেল ও ছয়টি কটেজে ৮৭টি কক্ষ রয়েছে। একটি মোটেলে ৪৯টি কক্ষ রয়েছে। আশা করছি আগামী কয়েকদিনের ছুটি পর্যন্ত আমাদের ৭৫-৮০ শতাংশ রুম ভাড়া থাকবে। এক প্রশ্নের তিনি বলেন, পর্যটক মৌসুমের তুলনায় এখন পর্যটকের সংখ্যা তেমন বেশি নয়। ছুটিতে কেন্দ্র করে অনেকেই বেড়াতে আসছেন।