২৩ জুলাই সকাল ৭.৩৩ মিনিটে ফেসবুকে নিজের ওয়ালে দেয়া স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘ আলবিদা’। এই স্ট্যাটাসের পর থেকেই নিখোঁজ ছেলেটি। পরিবারের পক্ষ নিখোঁজের কারণে চলছিলো খোঁজও। কিন্তু দিন গড়াতেই জানা গেলো, শহরের একটি স্কুল এন্ড কলেজের এক ছাত্রীও নিখোঁজ। দুইয়ে দুইয়ে দুই মিলিয়ে ততক্ষণে শহরজুড়ে জানাজানি হয়ে গেছে,সদ্য কৈশর পেরোনো দুই তরুণ তরুণী মূলত: নিখোঁজ নয়, একসাথেই পালিয়েছে,প্রেমের কারণে । দুইজন দুই ধর্মের হওয়ায় এনিয়ে বিব্রত দুই পরিবার চেষ্টা করছিলো তাদের খুঁজে বের করার। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। দুইদিন পর ২৫ জুলাই সকালেই জানা গেলো, যুগলভাবেই আত্মহত্যা করেছে এই দুই তরুণ তরুণী।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের বরগাং এলাকায় হ্রদের জলে দুই লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে প্রথমে মেয়েটির এবং পরে ছেলেটির লাশ উদ্ধার করে।
শহরের রিজার্ভবাজারের ঔষধ ব্যবসায়ি ছোটন দেওয়ানজির পুত্র প্রান্ত দেওয়ানজি হিমেল(১৮) এবং চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক এলাকার শহীদ তালুকদারের কণ্যা তাহফিমা খানম তিন্নি (১৮)। হিমেল ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর তিন্নি লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী। ছেলেটির বাসা রাঙামাটি শহরের রিজার্ভবাজার এলাকায় আর মেয়েটি রাঙামাটিতে এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে পড়াশুনা করছিলো।
রাঙামাটির কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহেদুল হক রনি জানিয়েছেন, এটি একটি ঘোষণা দিয়েই আত্মহত্যার ঘটনা। প্রেমের কারণেই এটি ঘটেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। দুইজন দুইধর্মের হওয়ায় প্রেমে সফলতার কোন সম্ভাবনা নেই দেখেই তারা আবেগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এই বিষয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা হবে।’
হিমেলের পিতা ছোটন দেওয়ানজী জানিয়েছেন, তারা দুজন প্রেমের কারণেই আত্মহত্যা করেছে বলেই মনে হচ্ছে। আমরা আসলে কিছুই জানতাম না। ভেবেছিলাম কোন কারণে নিখোঁজ হয়েছে। কিন্তু কেনো এটা করলো বুঝতে পারছিনা।’
অন্যদিকে মেয়েটি তার যে স্বজনের বাসায় থেকে পড়াশুনা করতো সেই নুরুল আলম মিয়া জানিয়েছেন, আমরা আসলে কিছুই বুঝতে পারছিনা। সে আমার বাসায় থেকে পড়াশুনা করতো। কিন্তু কিসের মধ্যে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছিনা।’
এদিকে সদ্য কৈশর পেরোনো দুই তরুণ তরুণীর মৃত্যুতে শোকাহত যেনো পুরো রাঙামাটি শহর। অনেকেই ফেসবুকে এই ঘটনায় বেদনা আর হতাশার স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ভালোবাসার এমন করুণ সলিল সমাধীতে বিস্মিত যেনো পার্বত্য শহর রাঙামাটি।