২০১৭ সালের ১২ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের স্মৃতির দিনটির ফিরে আসার মাত্র দুইদিন আগেই আবারো টানা বর্ষণে শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও পাহাড়ে ধস,ফাটল এবং গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে। রবিবার সকাল থেকেই ভারি বারিপাতের সূত্রপাতের পর থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও সন্ধ্যা নাগাদ বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ায় শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধস,ফাটল এবং গাছ ও বিদ্যুতের পিলার উপড়ে পড়ার খবর আসতে থাকে। সেই থাকে বাড়তে থাকে বৃষ্টির তীব্রতাও। শংকা ছড়িয়ে পড়া শহরবাসির ভয় তাড়াতে ও তাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে রাতেই মাঠে নামেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ,নেজারত ডেপুটি কালেক্টর তাপস শীলসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা,সাথে ছিলেন বিভিন্ন স্থানে ধসের নীচে চাপা পড়া স্থাপনা সড়িয়ে নেয়া ও সড়কের উপর পড়া গাছ কেটে সড়ক জজ্ঞাল পরিষ্কার করার কাজে প্রানান্ত পরিশ্রম করা ফায়ারসার্ভিস কর্মীরাও।
রবিবার সকাল থেকেই শহরজুড়ে দফায় দফায় মাইকিং করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারি মানুষদের সড়ে যেতে। কিন্তু এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে খুব কম মানুষই।
ফলে সন্ধ্যা থেকেই কার্যত বিদ্যুৎবিহীন শহরে পরিণত হওয়া রাঙামাটির বিদ্যুৎ কখন আসবে জানাতে পারেননি বিভাগটির দায়িত্বশীলরা।
বিদ্যুত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপাকে পড়েছে। তারা চেষ্টা করছেন দ্রুত শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে।
রাঙামাটি ফায়ারসার্ভিসের উপ পরিচালক দিদারুল আলম জানিয়েছেন, শহরের চম্পকনগর,আনসার ক্যাম্প এলাকা,উন্নয়ন বোর্ড এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক ও ভবনের পাশের মাটি সরে পড়া,সড়কের উপর গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা গাছ কেটে সড়িয়ে নেয়ায় এখন সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, চারদিক থেকে ভয়াবহ আতংক এবং টানা বৃষ্টির কারণে আমিও ঘরে বসে থাকতে পারিনি। শহরবাসির অবস্থা পর্যবেক্ষন এবং তড়িৎ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং কর্মকর্তা কর্মচারিরা সকাল থেকেই রাত অবধি মাঠেই আছে। আমি নিজেও রাতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিবো।
এদিকে রাত পৌণে দুইটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও বৃষ্টি হচ্ছিলো শহরে। তবে তীব্রতা ছিলো সন্ধ্যার পরের চেয়ে কিছুটা হলেও কম। কিন্তু ভয় এবং উদ্বেগ নিয়ে রাতজেগেই ছিলেন শহরবাসি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্কতামূলক নানান পরামর্শ ও পোস্ট দিচ্ছিলেন সবাই। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভও প্রকাশ করছিলেন অনেকেই।
প্রসঙ্গত,২০১৭ সালের ১২ জুন সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি টানা ভারিবর্ষনের কারণে সৃষ্ট পাহাড় ধসে রাঙামাটি পৌর এলাকা এবং জেলার কাউখালি,কাপ্তাই,জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলায় অন্তত: ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এদের মধ্যে ছিলেন পাহাড়ধসে মাটি পড়ে অচল হওয়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক চালু করতে যাওয়া ৫ সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ান। টানা ১৭ দিন সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো পার্বত্য শহর রাঙামাটির।