
রাঙামাটি পৌরসভার ওয়ার্ড গণনা শুরু হয় যে এলাকা থেকে সেই এক নং ওয়ার্ডে এবার কে কে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে জোর গুঞ্জন।
টানা দুই মেয়াদে নির্বাচিত বর্তমান কাউন্সিলর হেলালউদ্দিনের সাথে কে কে লড়বেন এবার, তা নিয়ে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষন। আলোচনায় উঠে আসছে নানান জনের নাম।
সব আলোচনা ছাপিয়ে এখন এই ওয়ার্ডে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় আছে,তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন, গতবার নির্বাচন করে হেরে যাওয়া তরুণ ক্রীড়া সংগঠক রমজান আলী, রিজার্ভবাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল শুক্কুর এবং ছাত্রলীগ নেতা মিজান চৌধুরী অভি। আপাতত এই চারজনেই ঘুরপাক খাচ্ছে ওয়ার্ডের ভোটের রাজনীতি।
বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত এবং সারের ডিলার হিসেবে পরিচিত কাউন্সিলর হেলাল এবারো বেশ শক্ত প্রার্থী। ‘সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক’ কাজে লাগানোর পাশাপাশি হেলাল চেষ্টা করছেন সংখ্যাগুরু’র ভোট বাড়াতে। মানুষের বিপদে আপদে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান,বিচার সালিশে সাহসী সিদ্ধান্ত প্রদান এবং এলাকাটি বিএনপি অধ্যুষিত হওয়াটা তার প্লাস পয়েন্ট। ‘দানশীলতা’ ও ‘মানুষের পাশে থাকা’র মানসিকতা তাকে এগিয়ে যেমন রাখবে,তেমনি ‘অতি আত্মবিশ্বাস’ আর ‘অহংকার’ তাকে পিছিয়েও দিবে।
পাশাপাশি জেলা আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতার সাথে ‘ব্যক্তিগত বিরোধ’ এবং আরেক নেতার সাথে ‘ব্যক্তিগত সখ্যতা’র মাঝখান দিয়ে টানা তৃতীয়বার বিজয়ী হওয়াটা সম্ভবত তার আগের দুইবারের মতো অতটা সহজ হবেনা।
ব্যক্তিগতজীবনে নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত,ক্রীড়া সংগঠক ও রিজার্ভবাজারের সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ হিসেবে পরিচিত মরহুম ‘ফজল হাজী’র পুত্র রজমান আলী। রাঙামাটির ক্রিড়াঙ্গনে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে আশৈশব জড়িত থাকা রমজানের আগের নির্বাচনে বিজয়ী না হওয়াটা সত্যিই হতাশার। ব্যক্তিগতভাবে খুব বেশি অর্থবিত্ত না থাকা কিংবা খরচ করতে না পারার সামর্থ্যই সম্ভবত তাকে পিছিয়ে দেয় ভোটের মাঠে। এইসব বিবেচনায় নিয়ে ভোটের মাঠে শেষাবধি তিনি থাকবেন কিনা,কিংবা আদৌ লড়বেন কিনা অথচা কিভাবে লড়বেন,তার উপরই নির্ভর করছে এবারো তার জয় কিংবা পরাজয়।
রিজার্ভবাজার ব্যবসায়ি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস শুক্কুর,সম্প্রতি আসবাবপত্র ব্যবসায়ি সমিতির নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন,সাধারন সম্পাদক পদে। তবলছড়ি এলাকায় বসবাস করলেও তার পৈত্রিক নিবাস রিজার্ভবাজারের এই ১ নং ওয়ার্ডেই। সঙ্গত কারণেই এই এলাকা থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী শুক্কুর। আর্থিকভাবে হেলালের সাথে ‘সেয়ানে সেয়ানে টেক্কা’ দেয়ার ক্ষমতা আছে তারই। সেইসাথে তার ‘ভোট মেকানিজম’ও বেশ সমৃদ্ধ। বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে আওয়ামীলীগে আসা শুক্কুর যদি ক্ষমতাসীন দলের সাথে বর্তমান কাউন্সিলরের বিরোধকে সুকৌশলে ব্যবহার করতে পারেন, তবে তার বিজয়ী হওয়াটাও বিচিত্র হবেনা।
রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজান চৌধুরী অভি। এবার ১ নং ওয়ার্ডে নির্বাচন করতে চান ফের। গত নির্বাচনের পর থেকেই মাঠে আছেন নানাভাবে। নির্বাচন করার আকাংখার কথা জানিয়েছেন দলের নানান ফোরামে। পরিবারের পরিচিতি,তরুণদের কাজে লাগানো এবং নিজের বন্ধু বান্ধব ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের পুরোদমে কাজে লাগাতে পারলে মিজানও একজন শক্ত প্রার্থীই এই ওয়ার্ডে।
মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন সবচে গুরুত্বপূর্ণ। যে প্রার্থী দলের মনোনয়ন পাবেন,সেই নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু কাউন্সিলরদের বিষয়টিতেও কি একই রকম কোন উদ্যোগ থাকবে ? দল কি সরাসরি না হলেও প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিবে কোন প্রার্থীকে ? এখনো নিশ্চিত নয় বিষয়টি।
তবে দলীয় ‘সমর্থন ও সহযোগিতা’ নানাভাবেই ভূমিকা রাখবে কাউন্সিলর নির্বাচনে। বিশেষ ক্ষমতাসীন দলের সহযোগিতা কিংবা বিরোধীতায় নির্ধারিত হতে পারে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ এইসব কাউন্সিলরদের জয় পরাজয়। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ‘ভূমিকা রাখা’টা নির্ভর করছে, রিজার্ভবাজারের ‘ভোটের মাঠের’ বাস্তবিক অর্থেই ‘নীরব নিয়ন্ত্রক’ হাজী মুছা মাতব্বরের ইশারায়।
কেউ মানুক না মানুক, রিজার্ভবাজারসম্পৃক্ত ১ নং ও ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া বা হেরে যাওয়ায়,মুছা মাতব্বর যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক,সেটা সর্বশেষ পৌর নির্বাচনেই প্রমাণ পেয়েছে পৌরবাসি ! এবারের নির্বাচনেও তার খুব একটা ব্যত্যয় হবেনা।
আবারো হেলাল,নাকি নতুন রমজান,শুক্কুর কিংবা মিজান,অথবা নতুন কেউ,কে হবেন পৌরসভার প্রথম ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর তা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হবে,তফসিল ঘোষণার পর,প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ দেখেই ! শুধু কি তাই ? নাহ্, রিজার্ভবাজার এলাকার ‘মুরুব্বী’ হিসেবে নিজস্ব নিয়ন্ত্রন বজায় রাখা হাজী মুছা মাতব্বরের ‘শরীরি ভাষা’ কিংবা ‘মুখের হাসি’ও জানান দিবে ভোটের আগেই,ভোটের পরে শেষ হাসি আদতে হাসবে কোন প্রার্থী,কাউন্সিলর হিসেবে !