আত্মবিশ্বাসী আওয়ামীলীগের পাশে দ্বিধান্বিত বিএনপি !

আজ ১ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাসে প্রবেশ করছে দেশ। সারাদেশের মতো পার্বত্য রাঙামাটিতেও চলছে নির্বাচনী আমেজ,আলোচনা,প্রত্যাশিত ফলাফল নিয়ে চুলছেড়া বিচার বিশ্লেষন। চায়ের কাপে কিংবা আড্ডায় আলোচনায় এখন নির্বাচনই মূলত: আলোচনার বিষয়। কিন্তু পার্বত্য জনপদের প্রাণকেন্দ্র ও পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় যে জেলা থেকে সেই পার্বত্য রাঙামাটির প্রতিদ্বন্ধি হিসেবে ১২ জন মনোনয়ন জমা দিলেও শেষাবধি মাঠে কে থাকবে তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে ক্ষমতাসীণ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের প্রিয় নেতা দীপংকর তালুকদারের প্রার্থীতা নিশ্চিত হওয়ার পর যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে নেমে পড়েছে ভোট প্রার্থনায় তখন তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্ধি বিএনপির নেতাকর্মীরা জানেই না,কে হচ্ছেন তাদের প্রার্থী ! মনিস্বপন দেওয়ান নাকি দীপেন দেওয়ান,কে হবেন এবার এই জেলায় ধানের শীষের নেতা সেই প্রতীক্ষায় দিন গুণছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিষয়টি বেশ হতাশার ও বেদনার বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তবে আপাতত কিচ্ছু বলার বা করার নেই তাদের। সারাদেশের মতো রাঙামাটি বিএনপিও তাকিয়ে আছেন লন্ডনের দিকেই,যেখানে দলটির মূল নিয়ন্ত্রক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের টেবিলেই এখন দলটির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।
নির্ভার আওয়ামীলীগ সংগঠিত হচ্ছে : শুরুতে উচ্ছাসে,মাঝে শংকার পর নিজেদের পছন্দের প্রিয় নেতার মনোনয়ন লাভের পর আত্মবিশ্বাসী রাঙামাটি আওয়ামীলীগ। দলটির মূল দল ও সহযোগি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন,পাড়া মহল্লায়,গ্রামে গ্রামে,শহর ছাড়িয়ে দূর পাড়াগাঁয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করছেন। সেইসব বৈঠক আর আলোচনার ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। নীরবে চলছে প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ ও ভোট কেন্দ্র পাহারা দেয়ার জোর প্রস্তুতি। বিগত নির্বাচনে পরাজয়ের ব্যবধান তৈরি করা ৫৩ টি কেন্দ্রের দিকেই বাড়তি নজর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সংগঠকদের। দলটির নেতাকর্মীদের দৃঢ় বিশ^াস,এই ৫৩ টি কেন্দ্রে স্বাভাবিক ভোটপ্রবাহ রাখতে পারলেই বিজয়ী হবেন তারা। শুধু সংগঠিত নেতাকর্মীই নন,দলটির প্রার্থী দীপংকর তালুকদার প্রতিদিনই বসছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে। দফায় দফায় বৈঠক করছে,জানছেন,পরামর্শ নিচ্ছেন,পরিকল্পনা তৈরি করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন ১৯৯১ সাল থেকে গত ২৮ বছর ধরেই পাহাড়ী এই জেলায় নৌকার একক,একমাত্র এবং অপ্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী দীপংকর।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর বলেছেন, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্ব,বিগত ১০ বছরের ব্যাপক উন্নয়ন ও পার্বত্য এলাকায় ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে জনগণের কাছে যাব। তার আগেই আমরা নিজেদের নেতাকর্মীদের সাথে বসে তাদের আকাংখা,প্রত্যাশা এবং ভাবনাগুলো জেনে নিচ্ছি। তাদের এইসব ভাবনা ও পরামর্শ থেকেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। সেই মোতাবেক মাঠে নামব এবং নিজেদের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমাদের বিশ^াস,যদি আঞ্চলিক দলগুলোর সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতি বন্ধ করা যায়,তবে অবশ্যই আমরা বিজয়ী হব। জনগণ আমাদের সাথে আছে।’ জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ এই নেতা পাহাড়ে চলমান সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রশাসনের শক্ত অবস্থানকে নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।
দ্বিধান্বিত বিএনপিতে অস্বস্তি : আওয়ামীলীগের সংগঠিত কার্যক্রমের বিপরীতে এখনো দ্বিধায় রাঙামাটি বিএনপি। মনিস্বপন দেওয়ান নাকি দীপেন দেওয়ান,কে হবে ধানের শীষের প্রার্থী এ নিয়েই সকাল সন্ধ্যা আলাপ,আলোচনা,সমালোচনা আর বিশ্লেষনে ব্যস্ত দেশের অন্যতম বৃহৎ এই দলটি। জেলা বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদলসহ মূল নেতৃত্ব চাইছেন প্রার্থী হিসেবে সাবেক পার্বত্য উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ানকেই। মনিস্বপন দেওয়ানও মনোনয়ন জমা দেয়ার আগেই বিএনপি কার্যালয়ে এসে নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন,আশ^াস দিয়েছেন বিজয়ী হওয়ার এবং বিজয়ী হয়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকার। তার বক্তব্যে চাঙ্গা দলটির নেতাকর্মীরা। তবে তবুও দ্বিধা কাটছেইনা যেনো,সবার ভাবনা আদৌ কি শেষাবধি মনোনয়ন পাবেন এই ক্যারিশম্যাটিক নেতা !
আত্মবিশ্বাসী মনিস্বপন দেওয়ানের পাশে খানিকটা হলেও ম্রিয়মান দীপেন দেওয়ান। মনোনয়ন যুদ্ধে তিনি আছেন জোরেসোড়ে,তবে কিছুটা দ্বিধা নিয়েই। কারণ বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদলসহ সংগঠনগুলোর মূল নেতৃত্ব তার পাশে নেই। চাকুরি ছেড়ে আসার গল্প,বিগত বছরগুলোতে দলে থাকা আর এককালের প্রবল বিরোধীতাকারি সাইফুল ইসলাম ভূট্টোর পাশে থাকার সুবিধা নিয়ে মনোনয়ন যুদ্ধে বিজয়ী হতে চান তিনি। কিন্তু মনোনয়ন তিনি পাবেনই,এমন গ্যারান্টি না থাকায় দ্বিধায় তার মতো তার কর্মী বাহিনীও।
ফলে মনিস্বপন কিংবা দীপেন দুজনের অনুসারিরাই তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে কিংবা লন্ডনের সিগন্যালের প্রতীক্ষায়। এই কারণে নির্বাচনকেন্দ্রীক কোন কাজই করতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা।
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মোঃ শাহ আলম বলেছেন, আমরা নির্বাচনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। প্রার্থীর বিষয়টি চূড়ান্ত হলেই পুরোদমে মাঠে নেমে যাব। আমাদের নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা আছে এবং নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট। এটা ঠিক যে,হয়তো আগে জানলে ভালো হতো,তবে সারাদেশেই তো আমাদের মতোই অবস্থা। সুতরাং এটা খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না। আমরা আশাবাদী।’
তবে আত্মবিশ^াসী এবং সংগঠিত আওয়ামীলীগের পাশে নির্বাচনের মাসে প্রবেশের পরও এলেমেলো ও দ্বিধান্বিত বিএনপি কতটা কি করবে বা করতে পারবে,সেই এখন ভাবনার বিষয়।