মিশু মল্লিক ॥
রংধনুটা মেঘ ছুঁয়েছে আকাশ নীলে,
রুপালী ঢেউ খেলে নদীর জলে, পায়ে পায়ের কাছে,
তুমি আসবে বলে
কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে, তুমি আসবে বলে……..
গীতিকার কবির বকুল লিখেছিলেন, প্রিয়তমাকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় রয়েছে কৃষ্ণচূড়ার রক্তরাঙা ফুলগুলো। তেমনিই আগুণরঙা কৃষ্ণচূড়া তার রক্তিম ভালোবাসায় রাঙিয়ে তুলেছে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকা। শহরের মানুষদের জন্য বিলিয়ে দিয়েছে লাল ভালোবাসা। রাঙামাটি শহরের উপজেলা পরিষদ কার্যালয় হতে ভেদভেদী যাওয়ার পথে কিংবা পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে, ফিসারী বাঁধে অথবা ডিসি বাংলো পার্কে, এইরকম অনেক স্থানেই চোখে পড়বে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়াগাছ। রাস্তার দু’পাশে উঁচুডালে থোকায় থোকায় কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ। লাল, হলুদ এবংকমলার মিশ্রণে প্রকৃতিকে সাজিয়েছে এক অপরুপ রুপে।
প্রখর রোদে পোড়াপ্রকৃতি যেন নিজেও তার প্রাণ ফিরে পায় কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটার মাধ্যমে। উষ্ণ আবহাওয়ায় দৃষ্টি ও মনকে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে কৃষ্ণচূড়াফুলের কোন জুড়ি নেই। গ্রীষ্মজুড়ে পাতাহীন গাছে অজ¯্র ধারায় ফুল ফোটে। রোদ বৃষ্টির মিশেলের প্রকৃতির এই মৌসুমে কৃষ্ণচূড়া আসে মানব মনকে শীতল পরশ বুলাতে, ক্লান্তি দূর করে নব উদ্যমে জাগিয়ে তুলতে।
রাঙামাটি শহরের এই কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো বেশ প্রাচীন। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে গাছগুলো তাদের রুপের পুরোটাই মেলে ধরে শহরের বাসিন্দাদের কাছে। কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে মুগ্ধ শহরবাসী প্রতিদিন ছুটে যান গাছতলে। বিশেষ করে শহরের কিশোর এবংতরুণ তরুণীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই গাছগুলো।
পুলিশ সুপার বাসভবনের সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে কয়েকজন বান্ধবী সহকারে ছবি তুলছিলেন প্রেয়সী চাকমা। তিনি জানালেন, শহরের কালিন্দীপুর এলাকা থেকে বান্ধবীদের নিয়ে কৃষ্ণচূড়াগাছ দেখতে এসেছেন তিনি। কৃষ্ণচূড়া গাছের এই অপরুপ দৃশ্য দেখে তারা যারপরনাই মুগ্ধ।
এই বছর সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য মেলে ধরেছে ভেদভেদী আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন গাছগুলো। এই গাছগুলোর নিচে প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই চোখেপড়ে স্থানীয় ও পর্যটকদের ভিড়। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ছবি তুলতে বেশি আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় সবার মাঝে। চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক নুরুল হুদা মাসুম উচ্ছসিত কন্ঠে বলেন, রাঙামাটি বেড়ানো শেষে আমরা ফিরে যাচ্ছিলাম। কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো দেখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে নামলাম। গোধুলীর আলোর সাথে মিশে ফুলগাছগুলো এক মায়াবী আবহের জন্ম দিয়েছে।
পরিবশেবাদী সংগঠন রাঙামাটি গ্লোবাল ভিলেজের পরিচালক হেফাজত বারী সবুজ বলেন, একসময় রাঙামাটিতে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, রাধাচূড়াসহ বিভিন্ন ফুলের অনেকগুলো গাছ ছিল শহরের মূল সড়কের দু’পাশে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রাস্তা সম্প্রসারণ, নতুন ভবন বা স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে এসবগাছ কেটে ফেলা হয়েছে এবং কিছু গাছ অযতেœঅবহেলায় মরে গেছে। যা কিছ ুঅবশিষ্ট গাছ আছে তাই এখন মানুষের মনের খোরাক মেটাচ্ছে। রাঙামাটিকে সত্যিকার অর্থেই ‘রুপের রাণী’ হিসেবে দেখতে চাইলে এই বর্ষা মৌসুমে প্রচুর গাছ লাগানো এবং সেসব গাছ পরিচর্যা করার কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।