গত ৬ মে পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে একদিনে ৪ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের একমাত্র জেলা ছিলো রাঙামাটি,যেটি করোনামুক্ত।
কিন্তু ৬ মে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই এখন পার্বত্য এই জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ৫৬ জন। সর্বশেষ গত ২৫ মে ঈদুল ফিতরের দিন জেলার লংগদু উপজেলায় এক স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা শনাক্ত হয়।
সেই হিসেব নিয়ে রাঙামাটির সিভিল সার্জন অফিস জানাচ্ছে, জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হওয়া রোগির সংখ্যা ৫৬ জন। রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু সারাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা জাতীয় প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত¡,রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষনা ইন্সটিটিউট(আইইডিসিআর) জানাচ্ছে, রাঙামাটিতে মোট শনাক্ত রোগি ৬৩ জন ! প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ওয়েবসাইটে সারাদেশের করোনা পরিস্তিতি ও আক্রান্তের যে তথ্য প্রচার করছে,সেখানে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে আক্রান্তের এই সংখ্যাটিই দেখানো হচ্ছে। এবং আইইডিসিআর এর এই তথ্যকে সামনে রেখেই সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে দেশী বিদেশী গণমাধ্যমে।
‘তবে রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিস ও আইইডিসিআর এর তথ্যের মধ্যে কেনো এই অমিল ?’- এই প্রশ্ন করেছিলাম আমরা রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা: বিপাশ খীসাকে।
জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের এই শীর্ষ কর্মকর্তা পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কমকে জানিয়েছেন-‘ আমরা যেসব নমুনা সংগ্রহ করছি এবং ফলাফল পাচ্ছি,সেই হিসেবেই তথ্য দিচ্ছি। আমাদের হিসেবে এবং কাগজপত্র ও ডকুমেন্ট অনুসারে,রাঙামাটিতে এইখন অবধি(২৬ মে) মোট শনাক্ত হয়েছেন ৫৬ জন।’
‘তবে আইইডিসিআর কেনো বলছে ৬৩ !’- জবাবে একটি সম্ভাবনার কথা জানালেন,ডা: বিপাশ।
তিনি বলেন,‘সম্ভবত রাঙামাটির ঠিকাকা,অর্থাৎ রাঙামাটিতে বাড়ি,অথচ চাকুরি বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অন্য জেলায় বসবাস করছে এবং সেখানে নমুনা দিয়েছে,এমন ব্যক্তিরাও আইডিসিআর এর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। সেটার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ আমার জানা মতে রাঙামাটিতে বাড়ি, কিন্তু বাইরে থাকেন,এমন কয়েকজনের করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।’
ডা: বিপাশ জানিয়েছেন, জেলাওয়ারি আমরা যে হিসেব দিচ্ছি,সেটাই হবে জেলার মোট শনাক্তের সংখ্যা।
পাহাড়টোয়েন্টিফোর এর অনুসন্ধানও বলছে, সিভিল সার্জনের ধারণাই সঠিক। সেই হিসেবে ৬৩ জনের মধ্যে ৫৬ জন রাঙামাটিতেই আক্রান্ত এবং বাকিরা রাঙামাটির বাসিন্দা হলেও আক্রান্ত হয়েছেন দেশের বিভিন্নস্থানে।
কারণ রাঙামাটি লংগদু উপজেলায় বাড়ি এমন একজন ট্রাক ড্রাইভার হবিগঞ্জে,বেতবুনিয়ায় বাড়ি এমন একজন স্বাস্থ্যকর্মী নারায়নগঞ্জে এবং রাঙামাটির বাসিন্দা কিন্তু ভৈরবে এসি ল্যান্ড হিসেবে কর্মরত এক সরকারি কর্মকর্তাও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং সুস্থ হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটির করোনা উপসর্গ ও সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় চট্টগ্রামের দুটি গবেষনাগারে। চট্টগ্রাম ভেটেনারি ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি)নামের দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই আসছে প্রতিদিন রাঙামাটির আক্রান্তদের খোঁজ। রাঙামাটির ১০ টি উপজেলার মধ্যে ৮ টি উপজেলার নমুনা পাঠানো হচ্ছে রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে এবং লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার নমুনা পাঠানো হচ্ছে খাগড়াছড়ির মাধ্যমে।