অদিতি আফ্রোদিতি
বলা হয়ে থাকে,যুদ্ধ প্রেম আর রাজনীতিতে ‘শেষ বলে কিছু নেই’ ! শেষ থেকেও ফিরে আসা যায় কিংবা একেবারে শেষ মুহুর্তেও বদলে যেতে পারে দৃশ্যপট ! তারই নজির যেনো আরো একবার দেখছে আয়তনে দেশের সবচে বড় জেলা রাঙামাটি। মাস ছয়েক আগে দেশের অন্যতম বড় দল,বিএনপির রাঙামাটি জেলা সম্মেলনে সাধারন সম্পাদকের একই পদে প্রার্থী হয়েছিলেন দুই তরুণ হেভিওয়েট নেতা,যে দুজনের পেশা আইনজীবি,রাজনীতির শুরুটাও প্রায় একই সময়ে ছাত্রদল হয়ে,নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন জেলা বিএনপিতে,সেই পনির আর মামুন।
সেই সম্মেলনে যার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন পনির এবং মামুন,সেই দীপু সাধারন সম্পাদকের পদ ছেড়ে সভাপতি নির্বাচন করায়,পুনরায় সাধারন সম্পাদক পদেই লড়তে মাঠে নেমেছেন সেই দুজন ! অথচ মাত্র মাসখানেক আগেও কে জানত,ইতিহাসের এমন ভয়ংকর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। যে পড়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন দুজনই সেই পদেই আবার ছয়মাসের মধ্যেই ভোটের লড়াইয়ে নামার সুযোগটি তৈরি হয়েছে মূলত জেলা সভাপতি হাজী মোঃ শাহ আলমের অকাল মৃত্যুতেই।
শুধুই কি সাধারন সম্পাদক পদের পনির-মামুন ? ছয়মাস আগে সভাপতি পদে যখন শাহ আলমের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে পরাজিত ভূট্টো কি জানত,ছয়মাস পরেই আবার সভাপতি হওয়ার সুযোগ আসবে তার সামনে ! নিয়তির কি অবাক পুনরাবৃত্তি,হেরে গিয়েও ফের সুযোগ অবারিত আরো একবার !
আবার যে দীপুর জন্য ছয়মাস আগে নিজেদের বলি দিয়েছিলেন পনির ও মামুন,সেই দীপুই সাধারন সম্পাদকের পদ ছেড়ে মামুন-পনিরের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন ! তবে টানা দুইবারের সাধারন সম্পাদক দীপু,এবার হয়ত বড় ঝুঁকিই নিয়েছেন নিশ্চিত পদ ছেড়ে,নতুন পদের লড়াইয়ে গিয়ে ! জিতলে তিনি হবেন ‘সুপার হিরো’, আর হেরে গেলে সম্ভবত তার রাজনীতির বাঁক বড় ধরণের বদলই হবে।
রাঙামাটির জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে কাছ থেকেই পর্যালোচনা করেন, এমন একজন সংবাদকর্মী হেফাজত সবুজ বলছেন,‘ এটা খুবই বিস্ময়কর একটি ঘটনা। মাত্র ছয়মাস আগে যে প্রার্থী নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন,তিনি ফের ভাগ্যক্রমে সভাপতি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, আবার যে দুজন সাধারন সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েও ছাড় দিয়েছিলেন,তারাই আবার সুযোগ পেলেন একই পদে প্রার্থী হওয়ার। ‘একটি মৃত্যু’তে কতগুলো সুযোগ তৈরি করল কতজনের। আসলে এটা পুরোটাই নিয়তির খেলা। বিএনপির জনপ্রিয় সভাপতি শাহ আলম’র মৃত্যুর কারণে এবং সিনিয়রিটি ইস্যুতে দীপুর সাধারন সম্পাদক পদ ছেড়ে সভাপতি পদে নির্বাচনে অবতীর্ণ হওয়ায় এই ‘রাজনৈতিক সুযোগ’ টির দ্বার অবারিত হয়েছে। বিএনপির ১৫১ জন কাউন্সিলরও ভাগ্যবান,তারা মাত্র ছয়মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার নেতা নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন।’
৯ জুন রাঙামাটি জেলা বিএনপির উপ নির্বাচন তাই শুধুই একটি রাজনৈতিক দলের জেলা কমিটির শীর্ষ দুই পদের নির্বাচনই নয়,ভাঙ্গা কপাল ফের জোড়া লাগার সুযোগই হয়ত ! সভাপতি পদে যদি দীপুকে হারিয়ে ভূট্টো জয়ী হোন আর সম্পাদক পদে মামুন বা পনির যেকোন একজন জেতেন, তবে এটা রাজনীতির এক বিরল উদাহরনই হবে,যেখানে হেরে গিয়ে বা ছেড়ে দিয়ে মাত্র ছয়মাসের মধ্যেই পুনরায় একই পদে নির্বাচনে জিতে ফিরে আসার নতুন ইতিহাসই সৃষ্টি করবে রাজনীতিতে। দেখা যাক,এই ইতিহাস জয়ের কপাল কতটুকুইবা প্রসারিত হয় কার ! ১৩ নভেম্বরের বিষাদ ৯ জুনে হাসিতে পরিণত করতে পারেন কিনা ভূট্টো-পনির বা মামুন,সেটাই এখন দেখার বিষয় !