আরমান খান, লংগদু
দুর্গম পাহাড়ের ছোট একটা গ্রামে বাস করেন উৎপলেন্দু চাকমা ও তার পরিবার। পরিবারের ছয় সদস্যের তিন জনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। পরিবারের আয় বলতে নিজেদের সামান্য ধানের জমির ফসল। নিজেরা প্রতিবন্ধী হওয়ায় ধানের জমিটুকু বর্গা দিয়েছেন। বর্গা চাষ থেকে যেটুকু ভাগে পান তাই দিয়ে কোনো রকম ৬/৭ মাস খাবারের যোগান হয়। এ ছাড়া অন্যের জমিতে কাজ করে কিছু রোজগার করেন উৎপলেন্দুর স্ত্রী। এই রোজগারেই ছয় সদস্যের পরিবারটি কোনো রকম দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন।
গত মে মাসের শুরুর দিকে উপজেলার লংগদু সদর ইউনিয়নের বড়াদম গ্রামে গিয়ে দেখা মেলে প্রতিবন্ধী উৎপলেন্দু চাকমার পরিবারের সঙ্গে। অর্ধেক মাটির দেয়াল আর বাকিটুকু বাঁশের বেড়া দিয়ে একটা ঘরে বসবাস করছে পরিবারের ছয় সদস্য। চালার টিন পুরোনো হয়েছে বৃষ্টি আসলেই পানি পড়ে পুরো ঘর ভিজে যায়। বৈশাখের ঝড়ে এমন নড়বড়ে ঘরে ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করেন তারা। ঘরটি মেরামত করবেন সেই সামর্থ্য নেই উৎপলেন্দু চাকমার।
আলাপচারিতায় জানান, উৎপলেন্দু চাকমার বড় ভাই নির্মলেন্দু চাকমা ও উৎপলেন্দুর এক ছেলেসহ তিনজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তারা। বড় ভাই প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিয়ে করেননি। তাই ছোট ভাই উৎপলেন্দুর পরিবারের সঙ্গেই তার বসবাস। তারা তিনজন প্রতিবন্ধী হলেও ভাতা পান শুধু উৎপলেন্দু চাকমা। উৎপলেন্দুর চার ছেলে মেয়ে। এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন প্রতিবেশী দিঘীনালা উপজেলায়। বাকিরা সবাই পরিবারের সঙ্গে আছেন।
প্রতিবন্ধী উৎপলেন্দুর কঠিন জীবন সংগ্রামে তার সহযোগী স্ত্রী রিনা চাকমা। রিনা চাকমার রোজগারেই টিকে আছে পরিবারটি। সরকারি তেমন কোনো সুযোগ সুবিধার খবর তারা রাখেন না। ফলে তাদের সাহায্যে কেউ এগিয়েও আসেন না। তখন এই প্রতিবেদক উৎপলেন্দু চাকমাকে প্রশ্ন করেছিলেন কী চান আপনি সরকারের কাছে? কী হলে আপনার বেশি উপকার হবে? জবাবে বলেছেন, ‘একটা ঘর হলে বেশি উপকার হবে’।

পরিবর্তীতে ‘একটা ঘর হলে বেশি উপকার হবে’ এই শিরোনামেপাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে খোঁজ নেন প্রতিবন্ধী উৎপলেন্দু চাকমার পরিবারের। এরপর ১১ মে এই পরিবারকে একটি নতুন ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাইনুল আবেদীন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে একটি নতুন ঘর পায় অসহায় পরিবারটি। সম্প্রতি সেই ঘরে বসবাস শুরুর করেছেন প্রতিবন্ধী উৎপলেন্দু ও তার পরিবার এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বড় ভাই নির্মলেন্দু চাকমা। উৎপলেন্দু চাকমা নতুন ঘর পেয়ে মহা খুশি। তবে বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং সৌর বিদ্যুতের অভাবে তাদের কষ্ট এখনো দূর হয়নি। এই অসহায় পরিবারটি এখন আরো একটু সহযোগিতা চায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাইনুল আবেদীন বলেন, প্রতিবন্ধী পরিবারটি একটি স্থায়ী আবাস পেয়েছে এটা খুবই খুশির খবর। আমরা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সিদ্ধান্তে প্রতিবন্ধী উৎপলেন্দু চাকমার জন্য একটি ত্রাণের ঘর বরাদ্ধ দিয়েছি। যা মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। আশা করছি এই পরিবারের অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।